অগ্নি V এর সফল উৎক্ষেপণ

ওড়িষা উপকূলের অদূরে ড. আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে পরমাণু সক্ষম দূর-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-V (পাঁচ)এর সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ দেশের প্রতিরোধ ক্ষমতার শক্তি বৃদ্ধি করেছে। ঘটনাক্রমে দেশে তৈরি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য এই ক্ষেপণাস্ত্রের এটি ছিল সপ্তম পরীক্ষা। ভারতের প্রতিবেশী অঞ্চলে যখন নিরাপত্তা আশংকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে সেই সময় এই ক্ষেপণাস্ত্রের অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে। ভারতের নীতি হল পরমাণু অস্ত্রের ‘প্রথমে ব্যবহার নয়’ (এম এফ ইউ)। ভারতের মুল লক্ষ্য হল প্রতিরোধের মাধ্যমে শান্তি সুনিশ্চিত করা।

প্রতিরোধ নীতিকৌশলের মূল উপাদান হল সামরিক ক্ষমতার বিকাশ এবং ক্ষেপণাস্ত্র সামগ্রিক যুদ্ধ সম্ভাবনা এবং প্রতিরোধ বৃদ্ধির সংযোজন হল ক্ষেপণাস্ত্র। দূর পাল্লার অস্ত্রের দুটি অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সংঘর্ষ অঞ্চলের দূরে গভীরে মোতায়েন থাকতে সক্ষম এবং দূরে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানার সক্ষমতা, ফলে যুদ্ধ স্থলের সম্প্রসারণ আর সেই কারণেই এটি প্রতিরোধ নীতির গুরুত্বপুর্ণ উপাদান। ৫০০০ কিলোমিটার পাল্লা বিশিষ্ট অগ্নি V পরমাণু অস্ত্র সরবরাহ যান হিসেবে সকল প্রয়োজন পুর করে। অগ্নি V পরমাণু প্রতিরোধের বর্তমান মূল্য বৃদ্ধি করে কারণ এতে দ্বিতীয় আক্রমণের একাধিক বিকল্প রয়েছে। তবে চিরাচরিত অস্ত্রমুখ সহ দূর পাল্লার অস্ত্রের পরিচালনগত উপযোগিতাও রয়েছে। পরমাণু বহির্ভুত শক্তিগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে। অস্ত্রের কৌশলগত মোতায়েনের জন্য ভারত মহাসাগর অঞ্চলে এর ভৌগলিক দৈর্ঘ্য-প্রস্ত ব্যবহার করে এর আওতায় আনা যেতে পারে।
ভারত মহাসাগরে যোগাযোগের সমুদ্র লেন ভারতীয় অর্থনীতির জীবন রেখা এবং নিরাপত্তা রক্ষায় ভারতীয় নৌ সম্পদ এখানে উপস্থিত রয়েছে। তবে, ভারত মহাসাগরে সজীবতা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। অতিরিক্ত আঞ্চলিক ক্ষমতা, ভারত মহাসাগরের দেশগুলির পরিকাঠামগত সমর্থনের ফলে তাদের সামরিক মোতায়েন বৃদ্ধি করছে এবং ভারতের স্বার্থ আঘাত হানতে পারে। নিয়মভিত্তিক শৃংখলা রক্ষায় ভারত মহাসাগরের বিস্তৃত অঞ্চলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর কমব্যাট এবং কমব্যাট সহায়ক বিমান প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে। অতিরিক্ত আঞ্চলিক শক্তিগুলি এই অঞ্চলে তাদের বিমানবাহী জাহাজ মোতায়েন করলে, এই অনুপাত বদলে যাবে। বিমানবাহী জাহাজ মোতায়েন করা হয় ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপের অংগ হিসেবে যাতে পরিচালনগত এবং রসদ সরবরাহের জন্য থাকে বেশ কয়েকটি কমব্যাট এবং সহায়ক জাহাজ।
দীর্ঘ পাল্লার ক্রুস ক্ষেপনাস্ত্র যেমন ব্রাহ্মস ইতিবাচক প্রতিরোধ প্রদানে সক্ষম কিন্তু দীর্ঘ পাল্লায় বিমান শক্তির অনবরত মোতায়েনে প্রচুর সহায় সম্পদের প্রয়জন। এই ধরণের দৃশ্যপটে চিরাচরিত অস্ত্র মুখ ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র যেমন এম আই আর ভি সহ আগ্নি V ব্যয় সাশ্রয়ী সরঞ্জাম হতে পারে।
সি বি জি প্রতিরোধের লক্ষ্যে একটি চিরাচরিত অস্ত্রমুখ সহ অগ্নি V এর জন্য ভ্রাম্যমান লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করণের ক্ষমতা বিকশিত এবং প্রদর্শিত হওয়া দরকার। লক্ষ্য বস্তু ব্যবস্থার আনুমানিক গতি এবং এর উৎক্ষেপণ ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ক্ষেপনাস্ত্রটির আনুমানিক পৌঁছনোর সময়ের মধ্যে ব্যবধানের ভিত্তিতে অগ্নি V এর সেন্সরগুলি তার ইপ্সিত লক্ষ্যবস্তু ব্যবস্থার জন্য ৩০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা স্ক্যান করতে পারে। হাইপারসোনিক গতিতে ভ্রাম্যমান লক্ষ্যবস্তুকে স্পর্শ করার মত ব্যবস্থাপনা এবং দিশা নির্দেশ এই মিশনের জটিলতার বৈশিষ্ট।
বর্তমানে ভারতের অস্ত্রসম্ভারে রয়েছে ৭০০ কিমি পাল্লার অগ্নি এবং সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম। তবুও দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মত কাইনেটিক অস্ত্রসস্ত্র বর্তমানের ‘ না যুদ্ধ না শান্তি’র পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
চিরাচরিত অস্ত্রমুখ সহ অগ্নি-৫ এর বিকাশ এবং বিমান বাহী জাহাজের মত ভ্রাম্যমান লক্ষ্যবস্ত্রু ওপর আঘাত হানার ক্ষমতা ভারত মহাসাগর এলাকায় শত্রু শক্তিগুলির প্রতিরোধে ভারতকে সহায়তা করবে। এই ধরণের প্রতিরোধ ভারত মহাসাগর অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং অবাধে চলাচলে সহায়ক হবে যা অঞ্চলের বিকাশ এবং উন্নয়নের জন্য একান্ত আবশ্যক। (মূল রচনাঃ উত্তম কুমার বিশ্বাস)