আমেরিকার কাছে পাকিস্তান ক্রমশ কোণঠাসা

সর্বশেষ ঘটনাক্রমে  মার্কিন বিদেশ মন্ত্রী মাইক পমপেও ধর্মীয় স্বাধীনতা হননকারী দেশগুলির তালিকায় ইসলামাবাদকে অন্তর্ভুক্ত করায় পাক-আমেরিকা  সম্পর্কে তিক্ততা এখন আরও তীব্র হয়ে দেখা দিল। আমেরিকা এর আগে চীন ও সৌদি আরবকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। উল্লেখ করা যায়, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বী মহিলা আসিয়া বিবি’কে তাঁর বিরুদ্ধে আনা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ থেকে পাক সুপ্রীম কোর্ট রেহাই দেন। এর পরেই দেশের মৌলবাদী মহল সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় অমান্য করে ওই আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এর প্রেক্ষিতে সংবাদপত্রের একাংশের খবর অনুযায়ী, আসিয়া বিবি ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে পাক সরকার নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে। অন্য একটি খবরে বলা হয়েছে,   তিনি ও তাঁর পরিবারের সকলে দেশ ছেড়ে নেদারল্যান্ডসে গিয়ে সে দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।

বাস্তব পরিস্থিতি হল, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্না দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান যে সে আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তা সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে সন্দেহাতীতভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

পাকিস্তানে ধারাবাহিকভাবে ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের প্রতি নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসছে। আর মূলত এই কারণেই তৎকালীন পূর্ব বাংলা যে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে তা এখন সর্বজনবিদিত।

জিন্নার মৃত্যুর পরেই  ভাষাগত ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচার ও নির্যাতন শুরু হয়। আর আমেরিকা পাকিস্তানে তার কৌশলগত স্বার্থের কারণে এই ধরণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও এতদিন এক প্রকার উদাসীন মনোভাব পোষণ করে এসেছে।

এই ঘটনাক্রমে এক মৌলিক পরিবর্তন  ঘটে  ২০১৬ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর। কার্যত দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কে   তিক্ততা এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এরই ফল স্বরূপ গত প্রায় দেড় বছর যাবৎ  ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্তরে নিয়মিত আরোপ প্রত্যারোপ এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।

পাকিস্তানকে একটি ধর্মীয় অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে  উল্লেখ করে ওয়াশিংটন ইসলামাবাদকে বারবার কোণঠাসা করছে। এর ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে চরম সংকটগ্রস্ত  পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কাছ থেকে ঋণ সংগ্রহ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। আর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আমেরিকা বিরোধী মনোভাব ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে।

এদিকে ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের নতুন সরকার  এক  প্রকার নিজ অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত এড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ধর্মীয়  স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নির্ণায়ক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া ইসলামাবাদের পক্ষে ওয়াশিংটন সহ সমগ্র আন্তর্জাতিক মহলের আস্থা অর্জন এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

গত তিন দশকেরও বেশি সময় যাবৎ ভারত পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে।   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সহ সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নতুন করে আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পাকিস্তানকে যে তার নেতিবাচক প্রতিচ্ছবি কাটিয়ে উঠে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায়  দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করতে হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। (মূল রচনাঃ-শৈলেন্দ্র মোহন কুমার)