ভারত ও নেপালের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পর্যালোচনা

নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গাওয়ালি চতুর্থ রাইসিনা আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য গত সপ্তাহে নতুন দিল্লি এসেছিলেন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে ভারত-নেপাল সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। উভয় নেতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ ও কৃষি সংক্রান্ত নতুন উদ্যোগ সহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক অগ্রগতির বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে সহযোগিতার অগ্রগতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো মজবুত করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার কথা পুণরায় তুলে ধরেন।

গত বছর মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেপাল সফরকালে উভয় দেশ অর্থনৈতিক বিকাশ এবং মানুষে মানুষে সংযোগ বৃদ্ধিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার  অগ্রগতির উল্লেখযোগ্য ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। ভারত ও নেপাল গতবছর রেল, কৃষি ও জলপথ – এই তিনটি ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে। উভয় দেশের জন্য জলপথে সংযোগ স্থাপনের বিষয়টি সম্পূর্ণ নতুন পদক্ষেপ।

এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে উভয় দেশের আধিকারিকদের মধ্যে গঙ্গা নদীর মাধ্যমে নেপালের কোশি ও নারায়ণী নদীতে পণ্য পরিবহণ পরিষেবা চালু করার বিষয়ে আলোচনা হয়। ২০১৮’র এপ্রিলে নেপালের প্রধানমন্ত্রী  কে পি শর্মা ওলির ভারত সফরকালে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য ও পরিবহণ চুক্তি অনুসারে ভারত-নেপালের মধ্যে জলপথে নতুন যোগাযোগ স্থাপনের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই নতুন আন্তঃ সীমান্ত পরিবহণ পরিষেবার সাহায্যে নেপালের সঙ্গে সমুদ্র সংযোগ তৈরি হবে এবং সুলভে  পণ্য পরিবহণ সম্ভব হবে। নতুন দিল্লিতে সাম্প্রতিক বৈঠকে উভয় নেতা এই বিষয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন।

ভারতের রক্সাল থেকে নেপালের কাঠমান্ডু পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেলপথ প্রকল্পের বিষয়ে প্রাথমিক সমীক্ষার জন্য গত বছর আগস্ট মাসে BIMSTEC শিখর সম্মেলনের অবসরে ভারত ও নেপালের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকপত্র স্বাক্ষরিত হয়। উভয় দেশ ভারতের আর্থিক সহায়তায় এই নতুন রেলপথ নির্মাণে সম্মত হয়। এক বছরের মধ্যে এই সমীক্ষা কাজ সম্পূর্ণ হবে। উভয়  দেশের বিদেশমন্ত্রী এই প্রকল্পটি ছাড়াও ভারতের সহায়তায় নেপালের অন্যান্য রেল প্রকল্পগুলির অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন।

গতবছর তৃতীয় যে ক্ষেত্রে ভারত ও নেপাল উদ্যোগ গ্রহণ করে তা হল কৃষি। উভয় দেশ আধুনিক কৃষি পদ্ধতির প্রশিক্ষণ, উন্নত বীজ, মৃত্তিকার মান, বনাঞ্চল এবং পশুপালন সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেপালের কৃষি, ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং সমবায় মন্ত্রী চক্রপাণি খানাল গত বছর জুন মাসে নতুন দিল্লি আসেন এবং ভারতের কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিং’এর সঙ্গে কৃষিক্ষেত্রে নতুন এই অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।

শ্রীমতী স্বরাজ এবং শ্রী গাওয়ালি এই সমস্ত নতুন উদ্যোগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ভারতের সহায়তায় নেপালের অন্যান্য   প্রকল্পের বিষয় নিয়েও তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। নেপালের বিদেশমন্ত্রী রাইসিনা  আলোচনায় তাঁর ভাষণে দুদেশের সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং মানুষের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির জন্য একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেন।   ভারতকে নেপালের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক সহযোগী হিসেবে উল্লেখ ক’রে তিনি বলেন, ভৌগলিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভারত এবং নেপালের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে, শ্রীমতী স্বরাজ বলেন, ভারত তার প্রতিবেশীদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। এই আঞ্চলিক সংযোগ ও আধুনিক পরিকাঠামো বিকাশের লক্ষ্যে ভারত কাজ করছে।  উল্লেখ্য, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক ও অবসার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে  রাইসিনা আলোচনার আয়োজন করে।

( মূল রচনা – রতন সালভি )