ভারত এবং প্রবাসী ভারতীয়দের ক্রমবর্ধমান সংযোগ

প্রবাসী ভারতীয়দের অবদান এবং সাফল্যের বিষয়ে আনন্দিত হবার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে। সারা বিশ্বে প্রবাসী ভারতীয়রা বৃহত্তম সম্প্রদায়। গ্রীক শব্দ ডায়স্পোরার অর্থ হল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিক্ষিপ্ত জনসংখ্যা যাদের ঐতিহ্য মৌলিকভাবে অভিন্ন, বিভিন্ন কারণে তারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।

এরা ভারতীয় বংশোদ্ভুত হতে পারে আবার অনাবাসী ভারতীয়ও হতে পারে, ভারতীয় প্রবাসীরা এক বড় ছাপ ছেড়েছে। তা সে রাজনীতি, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, বা জনসেবা যাই হোক না কেন, সর্ব ক্ষেত্রে প্রবাসী ভারতীয়রা নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছে।

একজন ভারতীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন ২০২০এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চ্যলেঞ্জ জানানোর পরিকল্পনা করছেন। ৫৪ বছর বর্ষীয় কমলা হ্যারিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন সেনেটর। সুন্দর পিচাই এবং সত্য নাড়েলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বৃহত্তম বহুজাতিক প্রযুক্তি  সংস্থার নেতৃত্ব দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্ট্রি করেছেন।

ভারতের মত প্রাচীন দেশের প্রবাসী ভারতীয়দের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধের যথেষ্ঠ কারণ আছে; দক্ষিণ আফ্রিকার একজন অনাবাসী ভারতীয় তদানিন্তন বর্ণ বৈষম্যবাদী এই দেশ থেকে দেশে ফিরে গত শতাব্দীতে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। আর স্বাভাবিকভাবেই মহাত্মা গান্ধী জাতীয় জনক হয়ে ওঠেন।

মরিশাসের মত দেশে ভারতীয়রা প্রায় দু’শ বছর আগে  শ্রমিক হিসেবে গিয়েছিল এবং এখন তারা এই গণতান্ত্রিক দেশের শাসক। পশ্চিম এশিয়ায় প্রবাসী ভারতীয়রা তাদের পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে আধুনিকীকরণের ভীত গড়েছেন।

চীনের পরেই প্রবাসী ভারতীয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। ৩১ মিলিয়ন প্রবাসী ভারতীয় ১৩৬টি দেশে বসবাস করেন এবং তারা বৈচিত্রময়। বিভিন্ন কারণে তারা অন্য দেশে চলে যায়। গত দু দশক থেকে ভারত এই প্রবাসীভারতীয়দের মধ্যে সংযোগ গড়ে তুলতে সম্মেলনের আয়োজন করছে।

এবার প্রবাসী ভারতীয় দিবস সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে পবিত্র শহর বারানসীতে ২১ থেকে ২৩ জানুয়ারী এবং এতে অংশ নেবেন প্রায় ৭০০০ প্রবাসী ভারতীয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধান অতিথি মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ জগনাথের সঙ্গে এর উদ্বোধন করবেন। বিশ্বায়ন বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসী ভারতীয়দের বিষয়গুলি বিদেশ নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংগ হয়ে উঠছে।

বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন যে দীর্ঘ দিন থেকে ভারতের সাংস্কৃতিক কূটনীতিতে   প্রবাসী ভারতীরা অস্বীকৃত এবং অবহেলিত ছি কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় সম্প্রদায় এবং সরকারের প্রতি তাদের অবদান এবং তাদের ক্ষমতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

ভারত সরকার প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধি করে দেশের বিকাশে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের অংশীদার করার জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। সমগ্র বিশ্ব একটি বিশ্ব গ্রাম হয়ে ওঠায় এবং প্রবাসী ভারতীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ আসছে যে ভারতের উচিত বিশ্ব শ্রম বাজারের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য অভিবাসন সংক্রান্ত একটি নীতি প্রণয়ন করা এবং উদ্বাস্তু শ্রমিকদের অধিকার এবং তাদের অভাব অভিযোগের নিরসনের জন্য একটি ডেটাবেস তৈরি করা।

বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী ভারতীয়রা ২০১৮তে ভারতে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাঠিয়েছে। চীন, মেক্সিকো, ফিলিপিন্স এবং মিশরকে পেছনে ফেলে ভারত এই ক্ষেত্রে এক নম্বরে উঠে এসেছে।

প্রবাসী ভারতীয়রা তাদের সংস্কৃতির উন্নতি বিধান করেছে এবং তাদের বুদ্ধিমত্তা, কঠোর পরিশ্রম এবং শিল্পোদ্যগের মাধ্যমে ভারতের এক ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে সারা বিশ্বে।

নতুন দিল্লী যুদ্ধ অঞ্চল বা সংঘর্ষ স্থল থেকে জরুরীকালীণ উদ্ধার কার্য চালিয়েছে এবং প্রবাসী ভারতীয়রা যখনই কোনো সমস্যায় পড়েছে বা বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে  ভারত সর্বদাই সক্রিয়ভাবে তা সমাধানের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

(মূল রচনাঃ সুনীল গ্যাটাডে)