আই এন এফ চুক্তি নিয়ে রুশ-মার্কিন উত্তেজনা

২০১৮র অক্টোবরে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন যে ওয়াশিংটন মাঝারী পাল্লার পরমাণু শক্তি চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবে। মাঝারী পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপণ নিষিদ্ধ করতে ১৯৮৭ সালে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগান এবং ইউ এস এস আর এর তদানিন্তন সেক্রেটারী জেনারেল মিখাইল গরবাচভের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এই চুক্তির আওতায় নিষিদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র  তৈরি ক’রে  রাশিয়া চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। রাশিয়া যদি চুক্তির বাধ্যবাধকতা পুরোপুরি পালন না করে তবে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯এর ফেব্রুয়ারীতে চুক্তি থেকে প্রত্যহার শুরু করবে এবং আগস্টের মধ্যে প্রত্যাহার সম্পূর্ণ করবে।

ওবামা এবং ট্রাম্প উভয় প্রশাসন এবং উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা NATO- নেতারা ছাড়াও পশ্চিমী সামরিক বিশ্লেষকগণ বলেছেন রাশিয়া আই এন এফ চুক্তি লঙ্ঘণ করছে। বিশেষ করে নোভাটোর ৯ এম ৭২৯ ক্রুস ক্ষেপণাস্ত্র এই চুক্তি ভঙ্গ করছে, তবে মস্কো এই অভিযোগ তীব্রভাবে খন্ডন করে আসছে।  অন্যদিকে, ক্রেমলিন বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ইওরোপে তাদের ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এই চুক্তির মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে। অবশ্য ওয়াশিংটন এই দাবী নস্যাৎ করে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক অস্ত্র সম্ভারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারছে না, তাই অ্যামেরিকার মোকাবিলা করতে তারা ভূপৃষ্ঠ ভিত্তিক ক্ষেপনাস্ত্র বিকশিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যরা মনে করেন চীনা সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান মাঝারী পালার ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতার দরুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে। মার্কন যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করেছে যে চীনের ক্ষেপণাস্ত্রের জবাব তারা কেবল সীমিত ভাবেই দিতে পারছে। যেহেতু রাশিয়া এবং চীন উভয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগী এবং আশংকার কারণ, তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এই চুক্তি থেকে সরে আসার দাবী ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে। রশ রাষ্ট্রপতি পুতিন সতর্ক করে দিয়েছেন যে অ্যামেরিকা চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে যদি ইওরোপে মাঝারী পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র মোতায়েনের চেষ্টা করে তবে রাশিয়া তার পাল্‌টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

মার্কিন প্রত্যাহারের ফলে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ প্রশস্ত হবে।  রাশিয়া জানিয়েছে তারা এই চুক্তিকে রক্ষা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী এবং চীনের মত অন্যান্য দেশকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষপাতী। তারা ওয়াশিংটনের ওপরে প্রভাব খাটানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইওরোপীয় সহযোগীদের কাছেও আহ্বান জানিয়েছেন। ইওরোপীয় নেতৃবর্গও রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই চুক্তি লংঘণের অভিযোগ সমর্থন করেছেন। এর ফলে যুদ্ধের আশংকা রয়েছে, কারণ তারাও ভৌগলিকভাবে এই অস্ত্র সীমার মধ্যে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মাঝারী পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত বাড়তে থাকলে ইওরোপীয় দেশগুলির স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।

আই এন এফ চুক্তি ভেঙ্গে পড়া এবং নতুন কৌশলগত অস্ত্র সম্ভার হ্রাসের আলোচনা বা START এ অনীহা এবং মহাকাশের জন্য একটি সংযুক্ত কমান্ড সৃষ্টি করতে পেন্টাগনের নির্দেশের ফলে মহাকাশে পরমাণু সংঘর্ষের আশংকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাকাশে অস্ত্র সম্ভার বৃদ্ধির মার্কিন আদেশ কার্যকর হলে রাশিয়াও উপযুক্ত পালটা ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বজায় রাখতে ইওরোপ ও এশিয়ায় মাঝারী পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন প্রতিরোধ করার পন্থা পদ্ধতি নিয়ে বিতর্কে নানা প্রশ্ন দেখা দেবে।

ভারত আশা করে বর্তমান সংকট এড়াতে ওয়াশিংটন এবং মস্কো উভয়েই আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হবে। নতুন দিল্লী বরাবরই সম্পূর্ণ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে সওয়াল করে আসছে। এখন সমগ্র বিশ্বের স্বার্থে শিল্পন্নোত দেশগুলিকে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে ঐকান্তিক প্রয়াস চালাতে হবে। (মূল রচনাঃ ড.স্তুতি ব্যানার্জী)