ভারত এবং কিরগিস্তান উন্নয়নী অংশীদারিত্ব মজবুত করছে

ভারত-কিরগিস্তান সম্পর্ক মজবুত করতে এবং নতুন দিশা দিতে কিরগিস্তান সাধারণতন্ত্রের বিদেশ মন্ত্রী চিংগিজ আজামাতোভিচ আইদারবেকভ তাঁর প্রথম ভারত সফরে আসেন। তিনি উপরাষ্ট্রপতি এম ভেংকাইয়া নাইডু এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী শিব প্রতাপ শুক্লার সঙ্গে দেখা করেন এবং বাণিজ্যিক মঞ্চে ভাষণ দেন।  এছাড়াও তিনি ভারতের বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে  প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনা করেন।

উভয় নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করেন। মূলত অর্থনৈতিক সহযোগিতা মজবুত করার বিষয়ে কথা হলেও প্রতিরক্ষা, প্রশিক্ষণ, তথ্য প্রযুক্তি, ই-প্রশাসন, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, ফার্মাসিউটিক্যালস, পর্যটন, চলচিত্র প্রযোজনা এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও কথাবার্তা হয়েছ। উভয় পক্ষ, তাদের সমাজে সন্ত্রাসবাদ এবং মৌলিকতাবাদ যে আশংকার সৃষ্টি করছে সে কথাও স্বীকার করে। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে এই ক্ষেত্রে মোকাবিলার বিষয়ে একমত হয়।

কিরগিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী শিক্ষা ক্ষেত্রে দুটি দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা বলেন। তিনি জানান কিরগিস্তানের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৯০০০এর বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছে। উভয় মন্ত্রী রাষ্ট্রসংঘ এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এস সি ও’র সহযোগিতার বিষয়েও কথাবার্তা বলেন। কিরগিস্তান ২০১৯এর জুনে সি এস ও শিখর সম্মেলন আয়োজন করবে এবং ভারত সেখানে পূর্ন সদস্য হিসেবে যোগ দেবে। কিরগিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে তাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

ভারত ও কিরগিস্তানের রাজনৈতিক সম্পর্ক খুব আন্তরিক, তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তুলনায় বেশ দুর্বল, মজবুত রাজনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অংকে মিল পাওয়া যায় না। ২০১৬-১৭তে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৪.৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিরগিস্তানে ভারতীয় রপ্তানীর পরিমান ২২.৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অন্যদিকে ভারতে কিরগিস্তানের রপ্তাণীর পরিমান ২.৩২ মিলিয়ন ডলার। শ্রী আইদারবেকভের সফর বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে তারা অর্থনীতি শিথিল করেছে, ফলে কিরগিস্তানে ভারতীয় কোম্পানীগুলির বিনিয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়ছে। শ্রী আইদারবেকভ বিশেষ করে রেলওয়ে এবং জল বিদ্যুৎ প্রকল্প সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতীয় কোম্পানীগুলিকে সেদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

কিরগিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী গতমাসে সমরকন্দে ভারত-মধ্য এশিয় বিদেশ মন্ত্রীদের আলোচনার প্রশংসা করেন।

নতুন দিল্লী মধ্য এশিয়ার অংশীদারদের সঙ্গে সর্বাত্মক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে গত সাড়ে চার বছরে এই অঞ্চলের প্রতি ভারতের ‘উত্তরের সঙ্গে সংযোগ’ নীতির লক্ষ্য হল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫তে পাঁচটি মধ্য এশিয় দেশে সফর করেন। গত অর্ধ শতকে এটাই ছিল এই ধরণের প্রথম সফর।

ভারতের মধ্য এশিয় নীতিতে কিরগিস্তানের গুরুত্ব ওপরিসীম। ১৯৯১ সালে কিরগিস্তান সাধারণন্ত্রের স্বাধীনতা লাভের পর ভারত ১৯৯২ সালে তাদের সঙ্গে প্রথমে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। দীর্ঘ বছর ধরে উভয় দেশ মজবুত কৌশলগত অংশিদারিত্ব গড়ে তোলার দিশায় কাজ করে আসছে। উভয় দেশের ঐকান্তিক সদিচ্ছা এবং আগ্রহের নিরিখে একথা বলাই যায় যে বিদেশ মন্ত্রী আইদারবেকভের সফরের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক নতুন গতি সঞ্চারিত হবে। (মূল রচনাঃ ড. মীনা সিং রায়)