পাকিস্তান আবার তার কঠোর ভারত বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করল। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী শাহ মহম্মদ কুরেশী সম্প্রতি অল পার্টী হুরিয়ৎ কনফারেন্সের নেতা মীরওয়াইজ উমর ফারুকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন। ক্ষুব্ধ ভারত, পাক হাই কমিশনার সোহেল মাহমুদকে ডেকে পাঠিয়ে পাকিস্তানের এই আচরণের তীব্র আপত্তি জানাল।
নতুন দিল্লি পাক বিদেশ মন্ত্রীর এই আচরণকে ভারত বিরোধী কার্যকলাপে ইন্ধন জোগানোর অভিসন্ধি বলে অভিহিত ক’রে ভবিষ্যতে এই ধরণের আচরণ থেকে বিরত থাকতে হুঁশিয়ার করে দিল।
পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার প্রয়াসের বদলে পাকিস্তান ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনার অজয় বিসারিয়াকে ডেকে পাঠিয়ে কাশ্মীরকে বিতর্কিত অঞ্চল হিসেবে আবার অভিহিত করে কাশ্মীরী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি কুটনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন অব্যাহত রাখার ধমকি দিল। শুধু তাই নয়, পাক বিদেশমন্ত্রী দ্বিতীয়বার সৈয়দ আলী শা গিলানীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন।
লক্ষ্য করার বিষয়, অমৃৎসরে ভারতীয় সীমান্তের কাছে পাক ভূখণ্ডে অবস্থিত শিখ ধর্মস্থল কর্তারপুর গুরদুয়ারা যাবার জন্য একটি সড়ক নির্মাণের বিষয়ে নতুন দিল্লির সঙ্গে চুক্তি হবার পরেই হুরিয়াত নেতাদের সঙ্গে ইসলামাবাদ আবার যোগাযোগ স্থাপনে উদ্যোগী হল, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আবার উত্তেজনা সৃষ্টির ক্ষেত্র প্রস্তুত করল।
উল্লেখ করা যেতে পারে, কিছু দিন আগে পাক বিদেশমন্ত্রীর ব্রিটেন সফরের সময় ব্রিটিশ সংসদের একটি কমিটি কাশ্মীর প্রসঙ্গ নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেন এবং এর পর একটি যৌথ বিবৃতি জারি করা হয়, যাকে পাক বিদেশমন্ত্রী কাশ্মীর প্রশ্নে তাঁর দেশের এক বড় মাপের কূটনৈতিক সাফল্য বলে অভিহিত করেন। তবে ব্রিটেন সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, শ্রী কুরেশীর ওই সফর ছিল একান্ত ব্যক্তিগত, কাজেই ব্যক্তিগত স্তরে কোনও আলোচনার প্রেক্ষিতে লব্ধ ফলাফলকে সরকারী বক্তব্য হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। ব্রিটেন আরও জানায়, ওই সফরে পাক বিদেশমন্ত্রী, ব্রিটেনের কোনও সরকারী প্রতিনিধির সঙ্গেই আলোচনার সুযোগ পান নি।
বিশেষজ্ঞ মহলে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট,যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণেই ইসলামাবাদ কাশ্মীর প্রশ্নটি বার বার উত্থাপন করে চলেছে। আর ভারতের পক্ষ থেকে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়াই স্বাভাবিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় আফগান সরকারের সঙ্গে তালিবানদের আলোচনায় ইসলামাবাদের কৌশলগত সুবিধা নেবার চেষ্টাও নতুন দিল্লির কাছে উদবেগের বিষয়। ইসলামাবাদ এই কাজে সফল হলে ও আফগানিস্তানে ক্ষমতার লড়াইয়ে তালিবানরা মজবুত অবস্থায় পৌঁছুলে সে দেশে ভারতের বিপুল মাত্রায় বিনিয়োগ কতটা সুরক্ষিত থাকবে যে ব্যাপারেও নতুন দিল্লির সংশয় রয়েছে।
ভারতে সাধারণ নির্বাচনের আগে ইসলামাবাদের সঙ্গে নতুন দিল্লির সরকারী স্তরে আলোচনার কোনও সম্ভাবনা না থাকায় দু পক্ষের মধ্যে বর্তমান উত্তেজনা আরও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তবে আশার কথা, এই পরিস্থিতিতেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পাক নেতাদের যোগাযোগ রক্ষার একটা চেষ্টা চলছে। যেমন দুবাইয়ে পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রী ফায়াদ চৌধুরীর সঙ্গে ভারতের কয়েকজন সরকারি প্রতিনিধির সাক্ষাতের কথা। এ মাসেও দু দেশের বেসরকারি মধ্যস্থতাকারিদের মধ্যে কয়েকবার আলোচনা ধার্য রয়েছে। এতে দুটি দেশের প্রাক্তন কূটনিতিবিদদেরও অংশ নেবার কথা। দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে ইসলামাবাদের একটি চিন্তন শিবির আলোচনার একটি বিকল্প পথ খোলা রাখার চেষ্টা করছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা সফল না হবারই আশংকাই বেশি। ভারত সরকার ২০১৫ থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে সর্বাত্মক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করে আসছে; কিন্তু নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ধারাবাহিকভাবে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন ও পাকিস্তানের ভূমি থেকে পরিচালিত ভারত সীমান্তে জঙ্গি হামলার ঘটনার কারণে নতুন দিল্লির পক্ষে তার এই প্রয়াস এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। পাকিস্তানকে এখন বুঝতে হবে ভারত সম্পর্কে তার অবস্থানে বারবার পরিবর্তনে সে আর আন্তর্জাতিক মহলের আস্থাভাজন থাকতে পারবে না। কাজেই পাকিস্তানকে এখন কথায় ও কাজে ভারত বিরোধী কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার প্রমাণ দিতে হবে। (মূল রচনাঃ- কল্লোল ভট্টাচার্য)