ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্র- উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি

ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রের বর্তমান কাজকর্ম বিশ্লেষণ করলে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে আগামী দিন গুলিতে এই ক্ষেত্র দেশের সাধারণ মানুষদের ভ্রমণের সুবিধা দানে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে।  কম ভাড়ায় বিমান ভ্রমণের সুবিধা, আধুনিক বিমান বন্দর,এই উৎপাদন ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ  প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ, অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ, বিধি নিয়মের সরলীকরণ ও আঞ্চলিক বিমান সংযোগ সুবিধা সামগ্রিকভাবে এর দ্রুত উন্নয়নের সহায়ক হয়েছে। ভারতের বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ- AAI’এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের দ্বিতীয় স্তরের শহরের সঙ্গে বিমান সংযোগ প্রতিষ্ঠার কারণে ২০১৮ সালে অসামরিক বিমান চলাচল ক্ষেত্রের ২৬ শতাংশের মত বিকাশ হয়েছে।

মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন- GDP’র হারে ক্রমাগত বৃদ্ধি; সাধারণ মানুষের জীবন ধারণের মানে উন্নতি; ও আঞ্চলিক বিমান সংযোগ স্থাপনের ফলে  বিমান যাত্রীদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আঞ্চলিক সংযোগ যোজনার আওতায় দেশের ২৩৫ টি বিমান সংযোগ পথ স্থাপন করা হয়েছে। ভারতে বিমান যাত্রীর সংখ্যায় গত এক দশকে বছরে অন্তত ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০০-২০০১ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র এক কোটি ৪০ লাখের মত। ২০১৭’তে এই সংখ্যা বেড়ে   ১৪ কোটি ও ২০১৮-১৯’এ ১৮ কোটি মাত্রায় পৌঁছেছে।  বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী, আগামী দিনে এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাবে। এই তথ্যের প্রেক্ষিতে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী সুরেশ প্রভূ বলেছেন,  এই ক্ষেত্রে  মাসিক ২০ শতাংশের মত বিকাশ হার অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে।

বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রে বর্তমানে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রথম সারির বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা- এয়ারবাস’এর সমীক্ষা অনুযায়ী, আগামী ২০ বছরের মধ্যে বিমান পরিবহণের মাত্রা সাড়ে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পাবে। এই বর্ধিত প্রয়োজন মেটাতে আগামী ২০ বছরে প্রয়োজন হবে অন্তত ২,৩০০ টি নতুন বিমান ও বেশ কয়েকটি নতুন বিমান বন্দরের। বর্তমানে দেশে ১০৩ টি বিমান বন্দর আছে। আর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে বিমান সংযোগ স্থাপনের যোজনাকে বাস্তব রূপ দিতে গেলে আগামী দিনে প্রয়োজন আরও অন্তত ১০০ বিমান বন্দরের।

কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্রেও অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্র উল্লেখযোগ্য অবদান যোগাচ্ছে। বর্তমানে এই উৎপাদন ক্ষেত্রে  প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৭৫ লাখ মানুষ বিভিন্ন পদে নিযুক্ত আছেন। এ ছাড়া মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন- GDP’তে এর অবদান দেড় শতাংশের মত।

অসামরিক বিমান চলাচল ক্ষেত্র প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ- FDI ‘এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ স্থল। এর আগে অভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় পথে সর্বাধিক ৪৯ শতাংশ ও সরকারী অনুমোদন স্বাপেক্ষে ৪৯ শতাংশের বেশি FDI ‘এর প্রয়োগ বিধিবদ্ধ ছিল। এখন অভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে সরকারের ১০০ শতাংশ FDI ‘এর অনুমোদন  এই ক্ষেত্রের বিকাশ প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই আরও গতি নিয়ে আসবে।

বিগত কয়েক বছরে সরকার ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রকে ঢেলে সাজানোর এক উচ্চাকাংক্ষামূলক পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই অঙ্গ হিসেবে ২০১৬ সালে জাতীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ নীতি রচনা করা হয়। আর এর মাধ্যমে  বিমান বন্দরের আধুনিকীকরণ ও নতুন নতুন বিমান বন্দর সংযোজন সহ এই উৎপাদন ক্ষেত্রের সার্বিক সংস্কার সাধনের একটি সুসংবদ্ধ কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখলে অদূর ভবিষ্যতে এই উৎপাদন ক্ষেত্র যে অর্থব্যবস্থার অন্যতম চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।(মূল রচনাঃ- শঙ্কর কুমার)