পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইরানের জবাব

পাকিস্তানের জঙ্গীদের আশ্রয় দেবার নীতির ফলে যেমন ভারতের ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে তেমনি পাকিস্তানের অন্য প্রতিবেশী ইরাণও অনুরুপ মনভাব প্রদর্শন করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার মাত্র এক দিন আগে ইরাণে একই ধরণের ধ্বংসাত্মক আক্রমনের প্রেক্ষিতে তারাও ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। ১৩ই ফেব্রুয়ারী বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি দক্ষিণ পূর্ব ইরাণের সিস্তান- বালুচিস্তান প্রদেশের  খাস-জাহেদান সেক্টরে ইরানের সেনা কর্মীদের একটি বাসের  সঙ্গে ধাক্কা মেরে বিস্ফরন ঘটানো হয়েছে।

এই জঙ্গী আক্রমণে ইস্লামিক রেভল্যুশনারী গার্ড কর্প্সের ২৭জন কর্মী প্রাণ হারান এবং ১২ জনের বেশি আহত হন। পাকিস্তানের জঙ্গী গোষ্ঠী জায়েশ-এ-মহম্মদ যেমন পুলওয়ামা আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে তেমনি অন্য একটি পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গী গোষ্ঠী জায়েশ আল-আদল ইরাণে জঙ্গী আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে। ইরান তাদের ইস্লামিক বিপ্লবের ৪০ তম বার্ষিকী উদযাপনের মাত্র দুদিন পর জঙ্গীরা ইরানে এই আক্রমণ চালায়।

এর পর ইরাণের অভ্যন্তরে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় সামরিক এবং অসামরিক শীর্ষ আধিকারিকরা অবিলম্বে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি নির্মূল করতে  বলেছে। ইরাণের অভ্যন্তরীন মন্ত্রী আব্দোলরেজা রহমানি ফাজলি আত্মঘাতী হামলার নিন্দা করে  পাকিস্তান সীমান্তে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইরাণ পাকিস্তানের কঠোর সমালোচনা করেছেন। সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য শ্রী ফাজলি ইরনের প্রতিবেশীকেই দায়ী করেন।

জঙ্গী গোষ্ঠী জায়েশ-আল-আদলের ঘাঁটি রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানে। ইরান ও পাকিস্তানের অসামরিক এবং সামরিক আধিকারিকরা  সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সহযোগিতার জন্য সফর বিনিময়ও করেন। গত ডিসেম্বরে ইরান ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা আধিকারিকরা ইরানের জাহেদান শহরে মিলিত হন এবং সীমান্ত সহযোগিতার বিষয়ে যৌথ বৈঠক করেন। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে  ইরান-পাকিস্তান যৌথ বাহিনীর অভিযান চালানোর কথাও বলা হয়।

তবে এই সব প্রয়াসই ব্যর্থ বলে মনে হয়। ফলে ইরাণীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। ২১শে ফেব্রুয়ারী ইরাণের আই আর জি সি বাহিনীর  কমান্ডার মেজর জেনারেল কাশীম সোলেমানি   সীমান্ত পাড়ের জঙ্গী আক্রমণ বন্ধ করতে পাকিস্তানকে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিন পাকিস্তানের প্রতি সীমান্তে অশান্তি সৃষ্টির জন্য এবং সমস্ত প্রতিবেশীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার জন্য পাকিস্তানের প্রতি দোষারোপ করেছেন। মেজর সোলেমানী পাকিস্তানকে ইরাণের পরীক্ষা না নেবার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।

অতীতে পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গীগোষ্ঠীগুলির দাবী অনুযায়ী ইরাণে একাধিক জঙ্গী হানা হয়েছে, তবে সর্বশেষ আক্রমণ সহ্য করা যাচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন ইরাণী আধিকারিক পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। ইরাণ সংসদের অধ্যক্ষ আই আলি লারিজানি পাকিস্তানকে এই আক্রমণের জন্য দায়ী করেছেন, আই আর জি সির প্রধান মেজর জেনারেল মহম্মদ আলি জাফারি সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেওয়ার পাকিস্তানী নীতির পরিবর্তন করতে বলেছেন, চীফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল মহম্মদ বাকের জঙ্গী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবার আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত এবং ইরান যৌথ ভাবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলার জন্য সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল সন্ত্রাসবাদের আশংকা নিয়ে আলোচনা করতে ইরান সফর করেন। ইরান এবং ভারতে জঙ্গী হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বুলগেরিয়া সফরের পথে হঠাৎ তেহেরানে যান। তিনি ইরানের উপ বিদেশ মন্ত্রী সায়েদ আব্বাস আরাগছির সঙ্গে দেখা করে ভারত ও ইরানের   ঘনিষ্ট সম্পর্ক নিয়ে বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিষয়ে আলোচনা করেন।

ভারত ও ইরান জঙ্গী মোকাবিলায় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারণ দুটি দেশই পাকিস্তান সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের শিকার। (মূল রচনাঃ ডঃ আসিফ শুজা