প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২১ সালের ১৬ তম প্রবাসী ভারতীয় দিবসে উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী সকলের প্রতি ২০২১ সালের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন! শ্রী মোদী বলেন, আজ ইন্টারনেট সম্ভবত বিশ্বের প্রতিটি কোণে বসবাসরত প্রবাসী ভারতীয়দের সংযুক্ত করেছে, তবে আমরা সকলেই মা-ভারতীর সাথে এবং একে অপরের প্রতি স্নেহের সাথে যুক্ত রয়েছি।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মা ভারতীর গৌরব বর্ধনকারী সহকর্মীদের প্রতি বছর “প্রবাসী ভারতীয় সম্মান” জ্ঞাপণ করে তাদের সম্মান জানানোর একটি ঐতিহ্য রয়েছে। ভারত রত্ন প্রয়াত শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর পরিচালনায় এই যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে ৬০টি দেশের প্রায় ২৪০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মানিত করা হয়েছে। একই ভাবে, বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার সহকর্মী ভারত কো জানিয়ে (ভারতকে জানুন) কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এই সংখ্যা থেকে দেখা যায় যে তারা শিকড় থেকে দূরে থাকতে পারে, তবে দেশের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সংযুক্তি ততটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কুইজ প্রতিযোগিতার ১৫জন বিজয়ী ভার্চুয়াল ইভেন্টে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী সকল বিজয়ীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য এঁরা সবাই প্রশংসার দাবিদার। তিনি এই কুইজ প্রতিযোগিতার সকল অংশগ্রহণকারীদের অনুরোধ করেন যে পরবর্তী কুইজ প্রতিযোগিতা যখন অনুষ্ঠিত হবে তখন তাদের আরও ১০ জনকে সংযুক্ত করতে হবে। শ্রী মোদী বলেন, প্রযুক্তি নতুন প্রজন্মের কাছে ভারতকে জানার সহজ উপায় করে দিয়েছে, যাতে তারা বিশ্বে ভারতের একটি পরিচয় তৈরি করতে পারে। তিনি প্রবাসীদের এই ধারণা এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত বছরটি ছিল আমাদের সবার জন্য বড় চ্যালেঞ্জের একটি বছর। তবে এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেও, আমাদের ভারতীয় প্রবাসীরা বিশ্বজুড়ে যেভাবে কাজ করেছে এবং দায়িত্ব পালন করেছে, তা ভারতের জন্য গর্বের বিষয়। এটি আমাদের ঐতিহ্য এবং এসবই আমাদের দেশের রীতি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন সুরিনামের রাষ্ট্রপতি শ্রী চন্দ্রিকা পরসাদ সন্তোখি। তিনি সেবার আদর্শের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ভারতের প্রতি সুরিনামের রাষ্ট্রপতির ভালবাসা আমাদের সকলের হৃদয় স্পর্শ করেছে। শ্রী মোদী বলেন যে ভারতে সুরিনামের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাতে ভারতীয়রা আগ্রহী। গত এক বছরে বিদেশী ভারতীয়রা প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের পরিচয় আরও সুদৃঢ় করেছে।
ভোজপুরি ভাষায় ভার্চুয়াল সম্মেলনে বক্তব্য রেখে সুরিনামের রাষ্ট্রপতি শ্রী সন্তোখি বলেন, ভারত থেকে সুরিনামে যাওয়া দর্শকদের ভিসা পারমিট তুলে দিতে সুরিনাম প্রস্তুত। তিনি আরো বলেন যে সুরিনাম ডায়াস্পোরা ভারতের সফট পাওয়ারের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ভারতও সুরিনাম সফট পাওয়ারের এক গুরুত্বপূর্ণ অংগ। তিনি বলেন ভিসা ছাড়া অবাধে দুটি দেশের মধ্যে যাতায়াত সম্ভব হলে শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি কেবং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রগুলি আরো সমৃদ্ধি হবে। রাষ্ট্রপতি সন্তোখি বলেন এই আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে আমরা পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল্য দিয়ে থাকি।
রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ সমাপ্তি অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বলেন, আমাদের ডায়াস্পোরা বিশ্বের কাছে আমাদের মুখ, এবং বিশ্ব মঞ্চে ভারতের কথা তুলে ধরে। ভারতের উদ্বেগ সৃষ্টিকারী আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরা হোক বা ভারতের অর্থনীতিতে অবদান যোগানো হোক, তারা সর্বদা আমাদের সহযোগিতা করে। রাষ্ট্রপতি বলেন যে ১৯১৫ সালের ঠিক এই দিনেই, সর্বশ্রেষ্ঠ প্রবাসী ভারতীয় মহাত্মা গান্ধী আমাদের সামাজিক সংস্কার এবং স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরও বিস্তৃতি প্রদান করতে ভারতে ফিরে এসেছিলেন। পরবর্তী দশকগুলিতে, বাপুজি বহু মৌলিক উপায়ে ভারতের পরিবর্তন করেছিলেন। তার আগে, তাঁর দুই দশকের বিদেশে অবস্থানকালে, বাপু বিকাশ এবং উন্নয়নের জন্য ভারতের যে পদ্ধতির অবলম্বন করা উচিত তার অন্তর্নিহিত মূল নীতিগুলি চিহ্নিত করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি বলেন যে প্রবাসী ভারতীয় দিবস ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত জীবনের জন্য গান্ধীজির আদর্শকে স্মরণ করার একটি উপলক্ষ্যও বটে। তিনি আরও বলেন, গান্ধীজির ভারতীয়তা অহিংসা, নৈতিকতা, সরলতা এবং ধারাবাহিক উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব আমাদের দিকনির্দেশক নীতি হিসাবে বর্তমান। রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ ৩০ জন ব্যক্তি ও সংস্থাকে মর্যাদাপূর্ণ প্রবাসী ভারতীয় সম্মান পুরষ্কারও প্রদান করেন। (মূল রচনা: কৌশিক রায়)